আলোর মনি রিপোর্ট: একেই বলে সভাপতির ক্ষমতার দাপট, ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ, ক’দিন বাকী থাকতে ক্ষমতা দেখিয়ে এক বিদ্যালয়ে ভুয়া সার্টিফিকেটে একাধিক মামলার আসামী ২ছেলের চাকরি দেয়া হয়েছে। ফলে এলাকায় বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
আর এ ঘটনাটি ঘটেছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের দেউতিরহাট দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী ও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগে। সম্প্রতি সময় ওই বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী পদে পরপর ৩টি পদে নিয়োগ দেয়া হয়। তার মধ্যে নৈশপ্রহরী ও নিরাপত্তাকর্মী এবং ১জন আয়া (মহিলা)। ৩টি পদে ২টিতে (২পদে) নিয়োগ পেলেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আজিজার রহমানের ২ছেলে।
অভিযোগ উঠেছে, সভাপতির ২ছেলের সার্টিফিকেট ভুয়া। তাছাড়া তার ছেলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আর এর সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত প্রধান শিক্ষক হিরালাল রায়।
অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আজিজার রহমানের ২ছেলের মধ্যে প্রথমে সুলতান মণ্ডলকে (নৈশপ্রহরী) ও পরে শাহাজাহান মন্ডলকে (নিরাপত্তাকর্মী) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। উক্ত সুলতান মন্ডল ও শাহাজাহান মন্ডল কখনই ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন না। অথচ ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে ৮ম শ্রেণির পাশ সার্টিফিকেট জাল করে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি যোগসাজসে প্রধান শিক্ষক হিরালাল রায় তাকে নিয়োগ দেন।
নৈশপ্রহরী পদে সুলতান মন্ডল এসএসসি পাস করলেও সভাপতির ছেলে হওয়ায় ৮শ্রেণি পাশে নিয়োগ পান। উক্ত সুলতান মন্ডলের নামে ৩টি মামলা রয়েছে লালমনিরহাট সদর থানায়। এর মধ্যে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ২টি (যাহার মামলা নং- ৪৫, তারিখ: ১২-০৪-২০১৪ইং, ধারা- ১৪৩/৪৪৮/৩০৭/৩২৬/৪২৭/৫০৬(২)/৩৪) ও (যাহার মামলা নং- ১৩, তারিখ: ০৭-০২-২০১৬ইং, ধারা- নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী) ২০০৩ এর ৭/৩০ এবং তদন্তাধীন রয়েছে ১টি (যাহার মামলা নং- ৩১, তারিখ: ০৮-০৭-২০২০ইং, ধারা-১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৪২৭/৩৮০/৫০৬/১১৪/৩৪) বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে শাহাজাহান মন্ডলকে (নিরাপত্তাকর্মী) পদে নিয়োগ নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠছে এলাকায়। নভেল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার দফায় দফায় লকডাউন কার্যকর করেন। চলতি বছরের সর্বশেষ লকডাউন ১০ আগস্ট পর্যন্ত ছিল। এ লকডাউনে সমস্ত অফিস আদালত বন্ধ ছিল। আর যদি শিক্ষা খাতের কথা বলি, তা তো খোলার কোন নাম গন্ধই নেই। তারমধ্যেও তারাহুরা করে দেয়া হয়েছে গত ১৪ জুলাই নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেউতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের। কারণ নিরাপত্তাকর্মী পদে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি আজিজার রহমান তার ছেলে শাজাহানকে এবং প্রধান শিক্ষক হীরা লাল রায় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় আয়া পদে সুমি বেগমকে নিয়োগ দিবেন। কিন্তু গত ২৪ আগস্ট সভাপতি আজিজার রহমানের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ ছিল। শিক্ষা অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুয়ায়ী ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ ১ মাসের কম হলে বিদ্যালয়ের সভাপতিকে আর ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়ন করা যাবে না। ফলে তড়িগড়ি করে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি আজিজার রহমান তার ছেলে শাজাহানকে এবং প্রধান শিক্ষক হীরা লাল রায় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় আয়া পদে সুমি বেগমকে নিয়োগ করেন। নিরাপত্তাকর্মী পদে শাজাহান মন্ডল ও আয়া পদে সুমি জে.এস.সি ও জে.ডি.সি পাশ করেননি। প্রধান শিক্ষক হীরা লাল রায় টাকার বিনিময় সুকৌশলে সার্টিফিকেট তৈরি করেছেন। যা ওই সার্টিফিকেট সুত্র ধরে নিচের ক্লাসগুলো তদন্ত করলে প্রমাণ মিলবে যে, সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক কি পরিমাণ অনিয়ম করেছেন।
এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হীরা লাল রায় এর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আজিজার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, নিয়োগের ব্যাপারে তিনি কোন কথা বলতে পারবেন না। যা জানার দরকার তার উত্তর প্রধান শিক্ষক দেবেন।
লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, ওই বিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগের অভিযোগ পেয়েছি। তা তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি। আর নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির সার্টিফিকেট জাল এবং তার নামে একাধিক মামলার বিষয়ে আমার জানা নেই।